The Daily Jonokontho
The Daily Jonokontho |
তবে চেহারা পাঠ করার ব্যাপারে মানুষের যে ক্ষমতা আছে সেটাকে প্রযুক্তিও দ্রুত ধরে ফেলছে। চেহারা পাঠের এই প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে আমেরিকার গির্জাগুলোতে উপাসনার জন্য সমবেত মানুষদের মনোযোগ টের পাওয়া যায়। ব্রিটেনে এই প্রযুক্তির সহায়তায় খুচরা দোকানিরা খদ্দের সেজে আসা ছিঁচকে চোরদের ধরছে। চীনে এই প্রযুক্তি দিয়ে রাইড-হেইলিংয়ের ড্রাইভারদের পরিচয় যাচাই করা হয়, ট্যুরিস্টদের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে যেতে দেয়া হয়। এ্যাপলের নতুন আইফোনে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে হোমস্ক্রিন আনলক করার ব্যবস্থা করা হবে। তবে মানুষের চেহারা সস্তায়, দ্রুততার সঙ্গে ও ব্যাপক পরিসরে রেকর্ড, সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণ করার ক্ষমতার কারণে একদিন প্রাইভেসি, আস্থা, ন্যায্যতা ইত্যাকার ধারণাগুলোর মৌলিক পরিবর্তন ঘটে যাবে।
প্রাইভেসির ব্যাপারটাই ধরা যাক। কারোর ছবি দূর থেকে সহজে তুলে নেয়া যায়। চেহারা চিনবার কর্মসূচীর জন্য ব্যবহারের উদ্দেশে একটা ফোন দিয়ে যে কারোর ছবি তুলে নেয়া যায়। রাশিয়ার ফাইন্ডফেস নামে একটি ন্যাপ আছে। এটি ভিকোনটেকটে নামে এক সোশ্যাল নেটওয়ার্কের ছবিগুলোর সঙ্গে আগন্তুকদের ছবিগুলো তুলনা করে দেখে এবং ৭০ শতাংশ নির্ভুলভাবে চেহারা শনাক্ত করতে পারে। চীন সরকার তার নাগরিকদের চেহারা রেকর্ড করে রাখে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর অর্ধেকেরও বেশি ছবি ডাটাবেজে সংরক্ষিত থাকে যেগুলো এফবিআই ব্যবহার করতে পারে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর এখন অপরাধীদের সন্ধান করার ক্ষমতায় এক শক্তিশালী অস্ত্র এসে যোগ হয়েছে। তবে তার জন্য নাগরিকদের প্রাইভেসিকে সুবিশাল মাশুল দিতে হচ্ছে।
চেহারা শুধু একজন ব্যক্তির নাম-পরিচয় বহন করে না। চেহারায় আরও অনেক তথ্যও ফুটে ওঠে। মেশিন সেই তথ্যগুলোও পাঠ করতে ও কল্যাণমূলক কাজে ব্যবহার করতে পারে। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান চেহারার বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে বিরল জেনেটিক অবস্থা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ণয় করতে পারে। সমকামী পুরুষ ও স্বাভাবিক পুরুষের ছবি দেখিয়ে এলগোরিদমের সাহায্যে ৮১ শতাংশ ক্ষেত্রে তাদের যৌনতার বিষয়টি সঠিকভাবে নির্ণয় করা গেছে সেখানে মানুষ নির্ণয় করতে পেরেছে মাত্র ৬১ শতাংশ ক্ষেত্রে।
তবে এমন মেশিনের অপব্যবহারও হতে পারে। বৈষম্য করার কাজে ব্যবহৃত হতে পারে। মেশিনের রিডিংয়ের ভিত্তিতে নিয়োগকর্তা তার পছন্দ-অপছন্দ অনুযায়ী কাউকে চাকরি নাও দিতে পারে। অবশ্য এমন মেশিন তাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে যেতে পারে যাদের গাত্র বর্ণ সাদা নয়। কারণ, অধিকাংশ ক্ষেত্রে শ্বেতাঙ্গ চেহারার ডাটা সেটের ভিত্তিতে এলগোরিদমকে ট্রেনিং দেয়া হয় বিধায় বিভিন্ন জাতিসত্তার ক্ষেত্রে সেগুলো ভাল কাজ করে না।
ডিএনএ থেকে চেহারা তৈরি
জীববিজ্ঞানী ও সান দিয়েগোভিত্তিক কোম্পানি ‘হিউম্যান লনজিভিটি’র প্রধান ক্রেইগ ভিনটার বিশ্বের বৃহত্তম জেনোমিক ডাটাবেজ তৈরি করেছেন এবং মানব জেনোম সিক্যুয়েন্সের তার একান্ত নিজস্ব একটা অপেক্ষাকৃত সস্তা ও দ্রুততর পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। তার সর্বশেষ একটা কাজ হলো একটা মানুষের চেহারা কেমন হবে তা তিনি তাদের জেনেটিক ডাটার ভিত্তিতে আগাম বলে দিতে পারেন।
‘হিউম্যান লনজিভিটি’ ৪৫ হাজার জেনোম সংগ্রহ করেছে। বেশিরভাগ নেয়া হয়েছে সেই সব রোগীর কাছ থেকে যারা ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় ছিল। কোম্পানি মেশিন লার্নিং পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে এসব ডাটা বিশ্লেষণ করে এবং জেনেটিক সিকোয়েন্সগুলো কিভাবে শারীরিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে যুক্ত তা আগাম বলে দেয়। কোম্পানির এই প্রয়াস এই পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে যেখানে কোম্পানির লোকেরা এক পলক না দেখেও মানুষজনের ফটোর মতো ছবি তৈরি করতে পারে।
সম্প্রতি ‘প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস’-এ প্রকাশিত এক নিবন্ধে ড. ভিনটার ও তার সহকর্মীরা সেই প্রক্রিয়াটির বর্ণনা দিয়েছেন। তারা এর নাম দিয়েছেন ‘ফেনোটাইপ-বেসড জেনোমিক আইডেন্টিফিকেশন।’ তারা বিভিন্ন নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠীর ও বয়সের ১ হাজার ৬১ জনের জেনোমের সিক্যুয়েন্স করেছেন। তারা তাদের মুখম-লের হাই রেজ্যুলেশন ত্রিমাত্রিক ছবি তুলেছেন এবং তাদের চোখ, গাত্র বর্ণ, বয়স উচ্চতা ও ওজন পরিমাপ করেছেন। এই তথ্যগুলোর ভিত্তিতে গড়ে তোলা হয়েছে এমন এক এলগোরিদম যা মানুষের জিনের ওপর নির্ভর করে বলে দিতে পারবে তার চেহারা কেমন দেখাবে।
একই এলগোরিদম অজগত জেনোমের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে ড. ভিনটারের দলটি এমন ইমেজ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে যা প্রতি ১০ জনের মধ্যে আটজনের বাস্তব ছবির সঙ্গে মিলে যায়। এক বছর আগে একই এলগোরিদম ব্যবহার করে কোম্পানি এক সাংবাদিকের জেনোমের ভিত্তিতে ২০ বছর আগে তার চেহারা কেমন ছিল সেই ইমেজ তৈরি করে দেখিয়েছে, ২০ বছর আগের ও পরের চেহারার বৈশিষ্ট্যগুলো অনেকাংশে মিলে যায়। এ নিয়ে অবশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় তোলপাড় কম হয়নি।
জেনোমের ভিত্তিতে মানুষের চেহারার ছবি তৈরির বেশকিছু সম্ভাবনাময় ব্যবহার আছে। বিশেষ করে আছে ফরেনসিক বিজ্ঞানে। অপরাধীর রেখে যাওয়া যে কোন জেনেটিক উপাদান যথা রক্ত বা শরীরের জলীয় অংশ থেকে তার চেহারা পুনর্নির্মাণ করা সম্ভব। এতে করে পুলিশের পক্ষে খুন, মারধর ও ধর্ষণের ঘটনাগুলোতে সন্দেহভাজনদের চেহারা দেখতে পাওয়া সম্ভব হবে। পুড়িয়ে ফেলে বা ক্ষত-বিক্ষত করে ভিকটিমকে চেনার অযোগ্য করা হলেও ওই একই প্রক্রিয়ায় তাকে শনাক্ত করা যেতে পারবে। উপযুক্ত নমুনা এখনও পাওয়া গেলে যে কেসগুলোর মীমাংসা হয়নি সেগুলো আবার উন্মুক্ত করা যেতে পারে।
ড. ভিনটার বলেন, জিন ও চেহারার মধ্যে এই যে সম্পর্ক তা দুদিক দিয়েই কাজে লাগানো যায়। ঠিক যেমন জিনকে কাজে লাগিয়ে চেহারার ছবি তৈরি করা যায় তেমনি চেহারার বৈশিষ্ট্য থেকেও জেনেটিক রোগব্যাধি নির্ণয় করা যায়। জানা গেছে, ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ জেনেটিক রোগ চেহারা বা করোটির আকার-আকৃতিতে পরিবর্তন ঘটায়। এর ফলে কোন কোন ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পক্ষে রোগীর চেহারামাত্র দেখেই তার রোগটি কি তা বলে দেয়া সম্ভব। সেই কাজটা কোন এ্যাপ যদি করতে পারে ক্ষতি কি।
যেমন ধরুন, বোস্টনভিত্তিক কোম্পানি এফডিএনএ একটি স্মার্টফোন এ্যাপ উদ্ভাবন করেছে যার নাম ফেস টু জিন। এই এ্যাপের সাহায্যে একজন ডাক্তার রোগীর ছবি তুলতে পারবেন। তারপর রোগীর উচ্চতা, ওজন ও ক্লিনিক্যাল ডাটাসহ সেই ছবি ইন্টারনেটে আপলোড করে সেই ফার্মের এলগোরিদমকে দিয়ে তার অনলাইন ডাটাবেজ থেকে সম্ভাব্য রোগগুলোর তালিকা বের করে আনতে পারবেন। ওই এ্যাপে ১০ হাজার রোগের তথ্য বের করার সুযোগ আছে। তার মধ্যে এ পর্যন্ত ২ হাজার ৫৯৯ রোগের বেলায় চেহারা দিয়ে রোগ নির্ণয় করা যেতে পারে। প্রতিটি রোগ নির্ণয়ের বেলায় সম্ভাবনার মাত্রা কতটুকু তার উল্লেখ থাকে। এমনকি জেনেটিক মিডটেশনের কারণে সেই রোগ হয়েছে কিনা, সেই সম্ভাবনার মাত্রাও উল্লেখ থাকে। এই এ্যাপটি ১৩০টি দেশের ডাক্তার ও গবেষকরা ব্যবহার করছে বলে জানা গেছে।
সূত্র : দ্য ইকোনমিস্ট
প্রকাশিত : ৬ অক্টোবর ২০১৭
**We don't own the contents that are posted**
Read the news from the original source: Courtesy: The Daily Jonokontho
Like us on Facebook to never miss another news update.
Comments
Post a Comment